‘মন্ত্রীর পাঠানো তালিকায় নাম নেই, টাকা পাঠান’

‘মন্ত্রীর পাঠানো তালিকায় নাম নেই, টাকা পাঠান’

আমি ব্যাংকের এইচআর থেকে বলছি। কয়েক মন্ত্রীর পাঠানো সুপারিশ তালিকায় তো আপনার নাম নেই। টাকা পাঠান, আমি চাকরি কনফার্ম করে দিচ্ছি। সম্প্রতি একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরিপ্রার্থীদের ভাইভা তালিকা ধরে এভাবেই ফোন করে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৪৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আর এ চক্রের প্রধান ছিলেন ওই ব্যাংকেরই একজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও)। তবে চক্রটির শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জালে ধরা পড়েছেন তারা। গত শনিবার সকালে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এ চক্রের দুই সদস্যকে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এসপিও তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী এবং আর্মি প্রিন্টিং প্রেসের সিনিয়র বাইন্ডিং অফিসার (সিভিল স্টাফ) সুপক বড়–য়া।

ডিবি সূত্র জানায়, সম্প্রতি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের একটি সার্কুলার দেখে ক্যাশ কর্মকর্তা পদে চাকরির আবেদন করেন ইকরাম হোসেন (ছদ্ম নাম) নামে এক তরুণ। পরে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয় তাকে। কিন্তু তার আগেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এইচআর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কবির হোসেন নামে একজন ফোন করেন তাকে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েক মন্ত্রীর সুপারিশ তালিকা এসেছে আমাদের কাছে। তাতে আপনার নাম নেই। তিন লাখ টাকা দিলে আপনার নাম তালিকায় যুক্ত করে দেওয়া হবে। জামানত হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদও জমা দিতে হবে।’ পরে ইকরাম তাদের কথামতো তিন লাখ টাকার চেক এবং সনদ জমা দেন। কিন্তু একপর্যায়ে সন্দেহবশত তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন টাকা গ্রহণকারী ব্যক্তি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে চাকরি করেন না। ওই ব্যক্তি আরও কয়েক জনের কাছ থেকে একইভাবে নগদ টাকা ও মূল সনদ হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে তিনি ডিবির কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।

ডিবি জানায়, তোফায়েল আহমেদ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে এসপিও পদে কর্মরত। তিনি ব্যাংকে চাকরিপ্রত্যাশীদের তালিকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সুপক বড়–য়াকে সরবরাহ করতেন। পরে সুপক বড়–য়া ব্যাংকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সেজে চাকরিপ্রত্যাশীদের ফোন করতেন। তারা দুজনে মিলে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টিমের সিনিয়র এসি নাজমুল হক বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত আমরা প্রতারণার শিকার ১৩ জনকে শনাক্ত করেছি। প্রতারক চক্রে আরও কেউ আছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখছি।

ডিবির একই টিমের ডিসি মোদাদাছছ্রে হোসেন বলেন, প্রতারক চক্রটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছি আমরা। এ বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও অতিরিক্ত সচিব আকবর হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন না। অভিযুক্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ ব্যাংকে খ-কালীন চাকরি করতেন। মৌখিক পরীক্ষার তথ্য তার কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment